October 19, 2025 Bangladesh

Blog Post

The Daily kaler chobi > অর্থ-বাণিজ্য > এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নূতন কর্মসূচী ঘোষনা আসছে

এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নূতন কর্মসূচী ঘোষনা আসছে

 

মোঃ রাজিব উদ্ দৌলা চৌধুরীঃ

* কলম বিরতির আজ তৃতীয় দিন আজ

রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ বাতিলের দাবীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অব্যাহত কলম বিরতি আজ তৃতীয় দিন। এর আগে, দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার কলম বিরতি পালন করতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়ো হওয়ার প্রাক্কালে চেয়ারম্যান সাহেবের আস্থাভাজন সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত সদস্য মোঃবেলাল হোসেন চৌধুরীর মদদপুষ্ট এবং আন্দোলনের গতিবিধি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ভাড়াটিয়া কিছু বহিরাগত জড়ো করে।

প্রথমে এই ভাড়াটিয়ারা সাংবাদিকদের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে থাকে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তা কিছুটা প্রশমিত হলেও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী থামাতে পারেনি। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন কমিশনারেট থেকে আসা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের দাবী নিয়ে একে একে আগমন করতে দেখে চেয়ারম্যান সাহেবের ইঙ্গিতে এবং ফ্যাসিস্ট থেকে শুরু করে সকল চেয়ারম্যানের সময়ে সুবিধাভোগী সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত সদস্য, মোঃ বেলাল হোসেন চৌধুরীর মদদে সাংবাদিকদের সাথে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে আন্দোলনরত সকলেরই ধারণা।

আন্দোলনে মহিলা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও থেমে নেই। অন্যদিকে, বহিরাগতদের দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছেন বলে জোরালো অভিযোগ উঠার পর ও সকলকে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। বহিরাগত কয়েকজন নিজেদেরকে সমন্বয়কের পরিচয় প্রদান করে বাক বিতন্ডার পূর্বে সদস্য, মোঃ বেলাল হোসেনের সঙ্গে তার কক্ষে দেখা করে আপ্যায়ন করে আসেন বলে সাংবাদিকরা সত্যতা পেয়ে থাকেন। জবাবে সদস্য, মোঃ বেলাল হোসেন চৌধুরী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার কক্ষে যে কেউ আসতে পারে,তাতে বাঁধা নেই।

এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে এনবিআরের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলবেন বলে জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃআলামিন গণমাধ্যম কর্মীদের জানালেও পরে দেখা যায় কিছু ভাড়াটে সন্ত্রাসী রাজস্ব ভবনের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। পুলিশও তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য, মিডিয়া ডেকে আনা হয়েছিল চেয়ারম্যান সাহেব কথা বলবেন বলে।পরবর্তর্তীতে দেখা গেল অন্য চিত্র। এধরনের নাটক মিডিয়ার সাথে দুঃখজনক।

পরবর্তীতে, কলম বিরতি শেষে আগত আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব দাবি দাওয়া উত্থাপন করেছেন তা হচ্ছে- প্রণীত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্র আলোচনা-পর্যালোচনা পূর্বক প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দসহ সব অংশীজনদের মতামত নিয়ে সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করা।

এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা তিনদিনের কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এর মধ্যে গতবুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি পালন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন দেশের সকল কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এ কর্মসূচির মধ্যে আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি।

আন্দোলনের পরিস্থিতি জানাতে বৃহস্পতিবার একদিকে বিকাল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সময়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় এনবিআর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে নানা নাটকীতার উদ্ভব হয় এনবিআর ভবনে।

এদিকে অধ্যাদশে বাতিলের আন্দোলন ঠেকাতে চেয়ারম্যানের পক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বহিরাগতদের এনবিআরে ডেকেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টাও করেন এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা। তবে এনবিআর সদস্য , মোঃ বেলাল হোসাইন চৌধুরী দাবি করেন, তার পূর্ব পরিচিত একজন সমন্বয়ক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।

তবে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আন্দোলন দমাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বহিরাগতদের এনবিআরে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। আর কলম বিরতি কর্মসূচি চলাকালে দুপুরের দিকে ২০ থেকে ৩০ জন্য ব্যক্তি এনবিআরে হাজির হন একটি ব্যানার নিয়ে। পুলিশ পাহারায় কিছুক্ষণ সমাবেশ করে চলে যান তারা। তারা এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন ও পদত্যাগ দাবি করেন।

এর মধ্যে দুপুর আড়াইটার দিকে জনসংযোগ কর্মকর্তা বার্তা পাঠান, তিনটায় সংবাদ সম্মেলন করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে উপস্থিত হন অনেক সাংবাদিক। এনবিআর চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে না এলেও কয়েকজন বহিরাগতকে দেখিয়ে তাদের বক্তব্য নিতে বলেন জনসংযোগ কর্মকর্তা।

বহিরাগত ইসমাইল সম্রাট নামের এই যুবক নিজে একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চান। এনবিআরের বিষয়ে তিনি কেন কথা বলবেন, এমন প্রশ্ন করলে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। এক পর্যায়ে জানান, এনবিআর সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরীর ডাকে তারা এসেছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন সাংবাদিকরা। সেখানেও একজন ছাত্র নেতার দেখা মেলে। ক্যামেরায় বক্তব্য না দিলেও বেলাল চৌধুরী দাবি করেন, এলাকার লোক হিসেবে দেখা করতে এসেছিলেন ঐ যুবকরা।

এদিকে, কলমবিরতি শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে বক্তব্য দেন উপকর কমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান ও কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সিফাত-ই-মরিয়ম। তারা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশের বিষয়ে বলেন, কোন সংস্কার মডেলের অনুসরণে রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বোধগম্য নয় যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার মডেলের পরিপন্থী। বাংলাদেশে বর্তমানে যে মডেলটি রয়েছে, তা ব্রিটিশ ভারতে ১৯২৪ সালের সেন্ট্রাল বোর্ড অব রেভিনিউ অ্যাক্টের মাধ্যমে গঠিত বোর্ডের মডেল।

এই মডেলের দুই উত্তরসূরী ভারত ও পাকিস্তান এই মডেল বহাল রেখেছে, ক্ষেত্রবিশেষে অধিকতর শক্তিশালী করা হয়েছে। গত ২০ বছরে যত সফল রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার হয়েছে, কোথাও এরকম ডিভিশন মডেলের দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি। সুতরাং আমরা কোন মডেল অনুসরণ করছি, সেটিও স্পষ্ট নয়।

কর্মকর্তারা বলেন, আমরা এনবিআর তথা রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের বিরোধী নই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। আমরা চাই এই সংস্কার যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হবে, দেশের স্বার্থ ও উন্নয়নধর্মী দর্শন এতে প্রতিফলিত হবে, রাজস্ব প্রশাসন অধিকতর কার্যকর, প্রগতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হবে, এবং সংস্কার কোনো গোষ্ঠীগত কায়েমি স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হবে না।

অধ্যাদেশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তারা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমের প্রকৃতি অত্যন্ত বিশেষায়িত এবং আইন নির্ভর। আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাটসহ রাজস্ব আইন ও নীতিমালার প্রয়োগে দীর্ঘমেয়াদী অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা ও নীতিগত গভীরতা প্রয়োজন হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষায়িত জ্ঞানের অনুপস্থিতিতে নীতিনির্ধারণে অসামঞ্জস্য ও বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটবে- যা সরাসরি রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কর্মকর্তারা বলেন, সংস্কার হলে তা হবে ভালোর জন্য, উত্তম কিছু অর্জনের জন্য। রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কারের জন্য জারিকৃত অধ্যাদেশের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নিদারুনভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। জারিকৃত অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান যে নেতৃত্বগত সমস্যা রয়েছে, সেটাকেই রাখা হয়েছে, তা অন্য ফরম্যাটে এবং একটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে। অর্থাৎ, সমস্যাকে স্বীকার তো করা হয়ইনি, বরং দুই বিভাগের সর্বোচ্চ পদে দুই নেতাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে সমস্যা আরো ক্রমাগত ভাবে বাড়বে।

বর্তমানে এনবিআরের প্রধান সরকার নিয়োগ করেন সচিবদের মধ্য থেকে, এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নয়। এনবিআরের মতো একটি অতি টেকনিক্যাল ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের বৈষম্য। জারিকৃত অধ্যাদেশের মাধ্যমে পূর্বের ধারাবাহিকতাই বহাল রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে, কোনো সংস্কার হয়নি, যেটি এনবিআর কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এর ফলে রাজস্ব প্রশাসনে উড়ে এসে জুড়ে বসার প্রথা চলতে থাকবে, যা রাজস্ব আদায় কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করবে।

তাদের ভাষ্য, এনবিআরকে বিভক্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের লক্ষ্যে একটি বিশেষ পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য সংস্কার-সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদনসমূহ যথারীতি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও, এই বিশেষ পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি, এমনকি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও সরবরাহ করা হয়নি। ফলে যে প্রতিষ্ঠানের সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত সকল সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রচার করা হলেও এই রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক বিশেষ পরামর্শক কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না করেই তড়িঘড়ি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত করা হলো। এতে প্রত্যাশী সংস্থার সাথে কোনো ধরনের আলোচনা ব্যতিরেকেই, যা গভীর সন্দেহের কারন হয়ে দাড়িঁয়েছে। এ ছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাঠামোগত সংস্কার সময়ের দাবি। তবে এই সংস্কার হতে হবে বাস্তবমুখী, অংশীজনের মতামতভিত্তিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে। তাই তারা জারিকৃত অধ্যাদেশটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভীত বিনষ্ট হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে বলে দৃঢ়ভাবে মনে করছে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *