মোঃরাজিব উদ্- দৌলা চৌধুরী
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরাতে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের অধীনে কাজ করছে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম (জেআইটি) বা যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দল। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরাতে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের অধীনে কাজ করছে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম (জেআইটি) বা যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দল। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জেআইটিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ১৯ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জেআইটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে এ তিন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। জেআইটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি দৈনিক কালের ছবিকে জানিয়েছে, পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে কি করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে ওই বৈঠক থেকে। এরই মধ্যে গতকাল মানি লন্ডারিং আইনের সংশোধন আনার বিষয়েও একটি বৈঠক হয়েছে। এছাড়া পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতেও আলাদা অধ্যাদেশ হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি) জেআইটির কাছে তাদের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। একই প্রতিবেদন এনবিআর চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন।
দেশের বৃহৎ ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের অধীনে ১১টি টিম কাজ করছে। তাদের সমন্বয় করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
প্রসঙ্গত, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যমান টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করে সরকার। এর আগে, অনুসন্ধান গতিশীল তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত রাখতে গত ৬ এপ্রিল চিঠি লেখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
চিঠিতে বলা হয়, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ১০ মার্চ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সমন্বয় জোরদার করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এছাড়া গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভায় যৌথ তদন্ত দলের কর্মকর্তারা জানান, ১১টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত তদন্তের পাশাপাশি তাদের দাপ্তরিক অন্যান্য কার্যক্রম থাকায় ওই তদন্তে পর্যাপ্ত সময় দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে ১১টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত তদন্ত কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে নিযুক্ত তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মামলায় নিয়োজিত রাখতে টাস্কফোর্সের সভায় সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে একটি অনুরোধপত্র পেয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এখন থেকে প্রতি মাসে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি ও করণীয় নিয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, প্রকাশিত শ্বেতপত্রের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে, যা পুনরুদ্ধার বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ ফেরত আনা, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে সভাপতি করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ১১টি অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ১১টি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এ যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দলে দুদক লিড সংস্থা হিসেবে কাজ করছে এবং সিআইডি, সিআইসি ও সিআইআইডি থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মনোনীত করে যৌথভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিএফআইইউ ওই অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম সমন্বয় করছে।