October 19, 2025 Bangladesh

Blog Post

The Daily kaler chobi > খেলাধুলা > বাংলাদেশের ফুটসাল নিয়ে আশাবাদী ইরানি কোচ

বাংলাদেশের ফুটসাল নিয়ে আশাবাদী ইরানি কোচ

 

ক্রীড়া প্রতিবেদক :
হামজা চৌধুরী ও সামিত সোমের আগমনে নতুন করে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে দেশের ফুটবলে। স্ট্যান্ডার্ড ফুটবলের পাশাপাশি সেই জোয়ার ছুঁয়ে গেছে ফুটসালেও।

এতদিন উপেক্ষিত থাকা এই খেলার বিকাশে বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সেই যাত্রার সূচনাতেই আন্তর্জাতিক মানের এক কোচকে দায়িত্বে এনেছে সংস্থাটি; ইরানের সাঈদ খোদারাহমি।
শনিবার রাতে ঢাকায় এসে রোববার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ৫৯ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ কোচ। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও ফুটসাল কমিটির চেয়ারম্যান ইমরানুর রহমানের সঙ্গে বসে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ ফুটসালের জন্ম হয়েছে। এটি এখনো শিশু, আর ইরান সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়। এই শিশুকে বড় করে তোলার দায়িত্ব আমি নিতে চাই। ’

ইরানে প্রায় প্রতিটি গ্রামে একটি করে ফুটসাল স্টেডিয়াম থাকলেও বাংলাদেশে নেই স্থায়ী কোনো অবকাঠামো। তবুও সাঈদ আশাবাদী। বললেন, ‘মিয়ানমারে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, সেখানেও একই অবস্থা ছিল। এখন তারা অনেক উন্নতি করেছে। আমি চাই, একদিন বাংলাদেশের মানুষও আমাকে মনে রাখুক। ’

দুই দশকের কাছাকাছি সময় ধরে ফুটসাল কোচিংয়ে যুক্ত রয়েছেন সাঈদ। শুধু ইরান নয়, মিয়ানমারের জাতীয় নারী ও পুরুষ ফুটসাল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন এএফসি’র ফুটসাল ইন্সট্রাক্টর হিসেবেও। তার কোচিংয়ে মিয়ানমারের র‍্যাঙ্কিং ১০৩ থেকে উঠে আসে ৮০-তে।

আগামী সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় বসছে এশিয়ান কাপ ফুটসালের বাছাইপর্ব। সেখানে প্রথমবারের মতো অংশ নেবে বাংলাদেশ। ইরান, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলবে তারা। কোচ সাঈদের অধীনেই হবে এই অভিষেক। তার ভাষায়, ‘চ্যালেঞ্জটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। ’

বাছাইপর্বের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫৩ জন খেলোয়াড়ের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। সেখান থেকে দুই ধাপে বাছাই করে ২৪ জনের একটি তালিকা আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে এএফসিতে জমা দিতে হবে। চূড়ান্ত স্কোয়াড হবে ১৪ জনের—যার মধ্যে থাকবে ২ জন গোলরক্ষক ও ১২ জন আউটফিল্ড খেলোয়াড়।

২০০৮ সালে একটি ঘরোয়া টুর্নামেন্টের পর থেকে ফুটসাল নিয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল বাফুফে। এবার পরিস্থিতি পাল্টাতে চায় তারা। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল জানান, ‘পুরুষদের পাশাপাশি নারী ফুটসাল লিগ চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব যেদিকে যাচ্ছে, আমাদেরও সেই দিকেই এগোতে হবে। ’

তবে চ্যালেঞ্জ যে অনেক, সেটা সবাই স্বীকার করছেন। দেশে এখনো ফুটসালের জন্য নির্ধারিত কোনো ইনডোর ভেন্যু নেই। আপাতত হ্যান্ডবল ফেডারেশন ও মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম ব্যবহার করেই অনুশীলন চালানো হবে। তবে বাফুফে জানিয়েছে, সরকারের সঙ্গে মিলে একটি নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে সাঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কতজন ফুটসাল কোচ আছেন? কতজন রেফারি, কতজন খেলোয়াড়? আমি যখন এসব প্রশ্ন করি, তখন বুঝি এটা সত্যিই শুরু। কিন্তু শুরু হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের শুধু ঢাকার ফুটবলের কথা ভাবলে চলবে না। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাতেও হয়তো তারকা ফুটসাল খেলোয়াড় লুকিয়ে আছেন। তাদের খুঁজে পেতে হলে শক্তিশালী লিগ গড়ে তুলতে হবে, সব জেলায় তৈরি করতে হবে স্টেডিয়াম। ’

বাংলাদেশের মানুষ, সংস্কৃতি ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ সাঈদ নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতিও ভাগ করে নেন। বলেন, ‘এখানে আসার আগে পরিবার বলেছিল, হয়তো খাবার খেতে পারব না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি যেন ইরানেই আছি। খুব ভালো আছি। ’

এই উন্নয়নের পথ যে একক কারও পক্ষে সম্ভব নয়, সেটাও স্পষ্ট করে দেন সাঈদ। বলেন, ‘আমাকে ভালো বলার দরকার নেই। ভুল করলে বলবেন, আমি শিখব। উন্নতির জন্য সমর্থন করবেন, ধ্বংস করার জন্য নয়। ’

সাঈদ খোদারাহমির হাত ধরে নতুন করে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশের ফুটসাল। এই যাত্রা কত দূর যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত—ফুটবলের পাশাপাশি এবার ফুটসালও জায়গা করে নিচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে।