বিশেষ প্রতিবেদক:
পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি:এর একজন উপসহকারী প্রকৌশলী মো: সোহেল ও তার গৃহিনী স্ত্রী তানিয়া সুলতানা মিলে একটি সুবিশাল প্রতারণার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেনবলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি চাকুরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন সৃষ্টি করে এরই মধ্যে স্বামী স্ত্রী মিলি শতাধিক চাকুরি প্রার্থির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ।
সোহেল বর্তমানে স্কাডা এন্ড মেইনটেনেন্স ডিভিশন এ কর্মরত। বর্তমানে তিনি দশম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা। কিন্তু রাজসিক জীবন যাপন করেন তিনি। বসবাস করেন রাজধানী ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিজাত এলাকা ইন্দিরা রোডের ২১০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটে।যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকারউপরে বলে জানা যায়।
চলাচলের জন্য রয়েছে ২টি বিলাস বহুল গাড়ী। যেখানে তারই প্রতিষ্ঠানের উদ্ধর্তন কর্মকর্তার দামী গাড়িতে চড়ার সুযোগ পান না সেখানে তিনি নিজে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হয়েও চলাচল করেন বিলাস বহুল নিউ ব্রান্ডের করোলা ক্রস এসইউভিতে (ঝটঠ) ব্রান্ডের গাড়িতে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৬০ লাখ টাকা ।
স্ত্রী তানিয়া সুলতানা (গৃহিনী)। হয়েও অজানা উৎসে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইন্দিরা রোডে ১টি সাইন বোর্ডেই রয়েছে তানিয়াও তার পরিবারের নামে ৩টি ঠিকাদারী লাইসেন্স।
এ গুলো হচ্ছে, (১) মেসার্স এসএমসি এন্টারপ্রাইজ, যার প্রোপাইটার তানিয়া সুলতানা। (২) কম্পিউটার সলিউশন, যার প্রোপাইটার মূলত মো: সোহেল (৩) মেসার্স তাহমিদ এন্টারপ্রাইজ যার প্রোপাইটার তার শ্যালক । মূলত : নিজের চাকুরির সুবিধা ব্যবহার করে সোহেল নিজে একটি ঠিকাদারি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকারী চাকরী বিধি অনুযায়ী কোন সরকারী কর্মকর্তা অন্য কোন ব্যবসার সাথে সরকারের অনুমতি ব্যতীত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবসার সাথে জড়িত হতে পারেন না। কিন্তু সোহেল তা করে যাচ্ছেন অনেক দিন ধরেই।
জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সোহেল ঠিকাদারী ব্যবসা করা ছাড়াও সাধারন জনগনের সাথে চাকুরী দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন।
সূত্রমতে, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় বসে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের আড্ডা। দেশের ডাক সাইটের অনেক নামী-দামী ব্যক্তিদের আগমন ঘটে তাদের ব্যবসায়িক আড্ডায়। একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ার গল্পটা অনেকটা চমকপ্রদ।
কাগজে কলমে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক স্ত্রী তানিয়া সুলতানা। তানিয়া সুলতানার কাগজপত্র টিআইএন জাতীয় পরিচয় পত্র ঘেঁটে দেখা গেছে যে তিনি পেশায় একজন গৃহিনী। তানিয়া সুলতানা পিতা মো: আবু তাহের, মাতা মর্জিনা খানম, স্বামীর নাম মো: সোহেল, জন্ম তারিখ ০২/০১/৮৯ ধর্ম ইসলাম, পেশা গৃহিনী, জাতীয়তা বাংলাদেশী। জাতীয় পরিচয় পত্র নং- ১৯৮৯৩৩৫৩০৯৮২৩০৫২৫ টি,আই,এন-১৪৮৮১১৯৮২১১৭।
তানিয়া সুলতানার জাতীয় পরিচয়পত্র সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার অঢেল সম্পত্তির তথ্য । মো: সোহেল এর স্থায়ী ঠিকানা ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার ফজলগঞ্জ এলাকার আলীগাঁও গ্রামের আব্দুল হক মাস্টারবাড়ীতে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তানিয়া সুলতানার পিতা আবু তাহের বিওএফ, গাজীপুর সেনানিবাস এলাকা গাজীপুর। সেনাবাহিনীতে কর্মরত পিতার সন্তানের এত সম্পদ হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এ দিকে দশম গ্রেডের বেতনের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী দশ বছরের ব্যবধানে কি করে ৩ কোটি মূল্যের ফ্লাটের মালিক হন তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ দিকে সোহেল ও তার স্ত্রীর সম্পদের অনুসন্ধ্যানে গণমাধ্যমের হাতে যে তথ্য এসছে তাতে দেখা যাচ্ছে, অতি সম্প্রতি পূর্ব রাজাবাজারে একটি স্বনামধন্য আবাসন কোম্পানী হতে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন আরেকটি আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ফ্লাট।
যা এখনো নির্মানাধীন। আফতাব নগরে এল ব্লকে রয়েছে তার আড়াই কাঠা মুল্যের আরো একটি প্লট। ৩ জন মিলে সাড়ে ৭ কাঠার উপর তৈরী হচ্ছে অত্যাধুনিক সুরম্য অট্টালিকা। উক্ত প্লটটির বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী হচ্ছে বিল্ডিংটি। বিল্ডিংটি নির্মানে ব্যয় হবে নুন্যতম ২০ কোটি টাকা।
৩ ভাগের ১ ভাগ হিসেব করলেও তার ৭ কোটি টাকা লাগবে। ইতোমধ্যে ৪র্থ তলার ছাদ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও ঢাকা সেনানিবাসের পাশে কালসীতে ক্রয় করেছে ২ টি ফ্ল্যাট। যার বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা। ১টি বায়না দলিল এর সূত্র ধরে দেখা গেছে, গাজীপুর মৌজায় ১০ তলা ১টি বাড়ী কাজ চলমান। উক্ত বিল্ডিংটি তার পিতা আবু তাহের ও মা মর্জিনা খাতুনের এর সাথে যৌথ ভাবে নির্মিত।
উক্ত বায়না নামায় দেখা যায়, মোট ১৯ জন মিলে উক্ত বিল্ডিংটি যৌথভাবে নির্মিত হচ্ছে। সেখানে ১টি ফ্ল্যাট বিক্রয়ে দাতা হিসেবে তানিয়া সুলতানার নাম রয়েছে । উক্ত বায়না নামাটি ২০২১ সালে সৃজনকৃত। উক্ত ঠিকানায়ও রয়েছে তানিয়া সুলতানার সম্পদ। উক্ত বায়নাচুক্তি নামায় স্বাক্ষী হিসেবে (১) আবদুল্লাহ আল-মামুন (২) এ, কে, এম আবু নাসের ও (৩) অসীম কুমার তিন জনই মো: সোহেল এর নিকটতম বন্ধু-বান্ধব ও ব্যবসায়িক অংশীদার।
এরা প্রত্যেকেই সরকারী চাকুরীরত। এদের প্রত্যেকের রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তার মধ্যে এ, কে এম আবু নাসের, অসীম কুমার ও সোহেল একই অফিসে কর্মরত। সোহেলের সমস্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম এবং নাসের। যে কিনা তার সাথে একই ফ্লোরে বসে অফিস করে। এই অফিসের একাধিক সূত্র গনমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ফার্মগেইট খামার বাড়ী, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে রয়েছে সোহেল এর আধিপত্য। স্থানীয় প্রভাবশালী একজন নেতার নাম ভাঙ্গিঁয়ে তিনি চলেন। খামারবাড়ী ও আশে-পাশে বর্তমানে তার প্রায় ১০-১২ কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ চলমান তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের নামে । তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ প্রায় শতাধিক চাকুরী প্রত্যাশীদের নিকট হতে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এমন অনেক অভিযোগের তথ্য প্রমান গণমাধ্যমের হাতে রয়েছে। তিনি যা কিছুই করেন না কেন; সমস্ত সম্পত্তি করেছেন তার স্ত্রী গৃহিণী তানিয়া সুলতানার নামে । তাই গৃহিনী হয়েও তানিয়া সুলতানা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন মহাপরিচালকের কাছে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় একজন সরকারী চাকুরীজীবির স্ত্রী কোটি কোটি টাকার মালিক হলে দুদক কী ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে। জবাবে ঐ কর্মকর্তা জানান,“দুদক দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে চলে”।
আর নব গঠিত মন্ত্রী সভা এার দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এবারের সরকারের প্রধান ও প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এ ধরণের দূর্ণিিত রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। সে হিসেবে তথ্য ও প্রমান আমাদের নজরে আসলে অবশ্যই আমরা দুদক আইনে ব্যবস্থা গ্রহন করব। তিনি আরও বলেন, সরকার নির্বাচনী ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করেছেন। সুতরাং, দুদকও সেই নীতিতেই কাজ করবে।
ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিজে কিংবা তার স্ত্রীর নামে যদি জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে থাকেন তাহলে দুর্নীতি দমন আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দুর্নীতিবাজরা আরও উৎসাহিত হবে। তিনি এ বিষয়ে তথ্য দিতে গণাধ্যমকে অনুরোধ করেন।
এ দিকে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ,কে,এম গাউছ মহীউদ্দিন আহম্মেদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে তো কোন লোকাল কেনাকাটা হয় না। তাহলে, একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কিভাবে এত সম্পদের মালিক হন তা আমার বোধগম্য নয়। পরে তিনি আরো তথ্যের প্রয়োজনে এইচ আর ডিভিশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।